Wednesday 9 December 2015














রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ের পানির পাম্পের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনার পুনঃতদন্ত কার্যত থমকে গেছে। হাইকোর্টের দেওয়া পুনঃতদন্তের নির্দেশের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।
তদন্ত থমকে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ওই নলকূপ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তদন্ত আর এগোচ্ছে না।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি এলাকায় গভীর পাইপে পড়ে যায় শিশু জিহাদ। পরদিন দুপুরে কয়েকজন সাধারণ যুবক চেষ্টা চালিয়ে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করে। গণমাধ্যমের কল্যাণে এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।
শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে বাবা নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে ওই পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর-এর মালিক প্রকৌশলী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। গত ৭ এপ্রিল এ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। কিন্তু আরও কয়েকজন আসামির নাম বাদ পড়ায় জিহাদের বাবা নাসির অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন। নারাজিতে আবু জাফর, সাইফুল ইসলাম, দীপক বাবু ও নাসির উদ্দিন নামের রেলওয়ের চার কর্মকর্তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার আবেদন করা হয়। শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনাস্থল ওই পানির পাম্প স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে এ চারজনেরও অবহেলা ছিল বলে নারাজিতে বলা হয়।
 নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জুন আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) নির্দেশ দেন। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।
জিহাদের বাবা নাসির বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আমি ছিলাম শোকাহত। থানা-পুলিশ একটা অভিযোগ লিখেছিল। সেখানে আমি শুধু সই করি। আর ওই অভিযোগটাই মামলা হয়। মামলায় দুজনের নাম ছিল। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি, আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আরও কয়েকজনের অবহেলা আছে। তাদের অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত না করায় আমি নারাজি দিয়েছি।’ নাসির বলেন, তিনি নারাজি আবেদনে নতুন চারজনের নাম দিয়েছেন। তাঁরা ওই পানির পাম্প স্থাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অথচ তারপরও কোনো তদন্ত হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জিহাদের  বাবা নাসির বলেন, মামলার তদন্ত এভাবে দীর্ঘায়িত হওয়ায় সুযোগ পেয়ে বসছে জড়িতরা। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন করে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে ক্ষতি আছে বলেও হুমকি দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে আমি রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। ওই নলকূপ স্থাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারা, তাঁদের নাম-ঠিকানা, তাঁদের পদবিসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে এ চিঠি দিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো উত্তর পাইনি।’ তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিচ্ছে না বলেই মামলা নিয়ে এগোতে পারছেন না তিনি। তবে তিনি এবার নিজেই রেলওয়ে কার্যালয়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগপত্র দেওয়ার চেষ্টা করব।’
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র এক মাস হলো আমি 
এ পদে যোগ দিয়েছি। এ বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আর তথ্য চাইলে অবশ্যই তথ্য দেব

No comments:

Post a Comment